‘মায়াকুমারী’ মূলত পঞ্চাশ ষাট দশকের একজন নায়িকার গল্প। তাঁকে বাংলা চলচিত্র জগতের নির্বাক সময়ের শুরু থেকে সবাক সময়েও দেখা যায়। স্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া সেই নায়িকার জীবনের নানান ঘটনাকে সুচারু ভঙ্গিতে সাজিয়ে গুছিয়ে ব্যবসায়িক সিনেমার গায়ে খুব সাবলীল ভাবে জড়িয়ে দিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। সিনেমার ব্যাকরণ এবং বাগধারা কতটা রপ্ত করেছেন সেটা বোঝা গেল এই ছবি দেখে। এ যেন একটা সিনেমার ভেতর আরও একটা সিনেমা দেখা। সিনেমার ট্যাকনিকাল সংঘাতের সাথে সাথে অতীত, বর্তমান সীমারেখা মুছে দিয়ে দুই কালকে একটা জায়গায় এনে একাকার করে দেওয়া একটা নাটকীয়, মজাদার, উপভোগ্য সিনেমার উদাহরণই এই ‘মায়াকুমারী’।

আগের দিনের পর্দায় এবং পর্দার বাইরের জনপ্রিয় জুটি কাননকুমার ও মায়াকুমারীর প্রেম এবং এখনকার সময়ে কাননকুমারের নাতি আহির ও নতুন নায়িকা রুনির সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমাতে। আর এই দুই ভিন্ন সম্পর্ককে এক সরলরেখায় টেনে, দুই সময়ের ছবি, ছবির পরিবেশ সবকিছুকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসমস্ত কিছু এবং মায়াকুমারীর হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে নিয়ে একটা রহস্যাবৃত চিত্রনাট্য লিখেছেন শুভেন্দু দাস মুন্সী। আর ক্যামেরার সামনে এই দুই সময়ের মানুষ কীভাবে এক হয়ে ওঠে ও একাকার হয়ে যায় সেটাই খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন অরিন্দম শীল।
সময়ের প্রতি যত্নবান থেকেই ছবির গান ও সুরের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিক্রম ঘোষের সুরে গায়কদের গায়কিতে চল্লিশ পঞ্চাশ দশকের আমেজ মনে করিয়ে দিলো। কাননদেবী ও সুচিত্রা সেনের কথা বারবার এসেছে এই চিত্রনাট্যে এমনকী প্রমথেশ বড়ুয়া সাহেবের কথাও মনে পরে যেতে পারে কাননকুমারকে “কুমার সাহেব” নামে ডাকার মধ্যে।
এই ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, আবির চ্যাটার্জি, অরুণিমা, ইন্দ্রাশিস, সৌরসেনী, অর্ণ, অম্বরীশদের সামগ্রিক অভিনয় বেশ ভালো লাগলো। প্রত্যেকেই সময় ও পরিবেশকে মাথায় রেখে পর্দায় নিজ নিজ চরিত্রকে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পুরানো দিনের গীতিকার ও মায়াকুমারীর স্বামী শীতলের ভূমিকায় দেখা গেল রজতাভ দত্তকে। তাঁর অভিনয় অবশ্যই আলাদা ভাবে নজর কাড়ে। যদিও বোঝা যাছিল আবির, অরুণিমা ও ঋতুপর্ণা তিনজনই কিছুটা অস্বস্থিতে পড়েছিলেন প্রস্থেটিক মেকআপ নিয়ে কিন্তু সেটা তাঁরা উতরে দেন তাঁদের অভিনয়ের উৎকর্ষতায়।
পরিচালক জানিয়েছেন,’বাংলা সিনেমার শতবর্ষের প্রতি এই ছবি তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য।’ নিশ্চিত ভাবেই মায়াকুমারী এক বিনম্র নিবেদন। একথা বলা যায় যে, বাংলা সিনেমার নস্ট্যালজিয়ায় ডুবে যাওয়ার একটা সুযোগ করে দিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল।
তিতাস