অঞ্জন দত্তের হাত ধরে সুব্রত শর্মা, বাঙালি গোয়েন্দাদের ভিড়ে দর্শকদের মনে ঠিক কতটা জায়গা করে নিল ?

170

অঞ্জন দত্ত ‘ড্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’-র গোয়েন্দা সুব্রত শর্মাকে নিয়ে এর আগেও সিরিজ করেছিলেন। তবে এবার তাঁরই লেখা সম্পূর্ণ নতুন গল্প নিয়ে বড় পর্দায় দেখা গেল ‘রিভলবার রহস্য।’ লেখার ধরণ ‘পাল্প ফিকশন থ্রিলার’ গোছের। তবে ডিটেকটিভ বলতে আমরা যেমনটা বুঝি এই গোয়েন্দা কিন্তু একেবারেই সে ছকের মধ্যে পড়ে না। গোয়েন্দাসুলভ কোন আচরণই তার মধ্যে নেই। কোনদিন গোয়েন্দা হওয়ার ইচ্ছাও তার ছিলোনা। উত্তর কলকাতার রকে বসে আড্ডা দেওয়া, গলিতে ক্রিকেট খেলা,পাড়ার চায়ের দোকানে ম্যাজিক দেখানো, অল্প-সল্প ঢপ মারা, বারেবারে প্রেমে পড়া খুব সাধারণ চেহারার একজন এই গোয়েন্দা। যার নাম সুব্রত। আর সুব্রত (সুপ্রভাত দাস) তার সহকারীকে দাবড়ে রাখবে কী! উল্টে তার সহযোগী ড্যানি ব্যানার্জী (অঞ্জন দত্ত) তাকে ধমক দেয়। যদিও তার বস ড্যানি একটা কেস সলভ করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন । কিন্তু এখনো তার সঙ্গে থেকে তাকে গাইড করে থাকে।

ছবিতে কলকাতার এক ব্যবসায়ী রাজা ব্যানার্জির (সুজন নীল মুখোপাধ্যায়) স্ত্রী মালতি নিখোঁজ। পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্বামীকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন স্ত্রী। লোকলজ্জার আশঙ্কায় পুলিশে খবর না দিয়ে ডিটেকটিভ এজেন্সির শরণাপন্ন হয় রাজা। কিন্তু ড্যানি তো মারা গেছেন । তাই কিছুটা মিথ্যের আশ্রয় নিয়েই কেস টা হাতে পায় সুব্রত।

বৃষ্টিভেজা দার্জিলিং শহর। নিখোঁজ মহিলাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সুব্রত। আর তার পথপ্রদর্শক হয়ে সবসময় তার পাশে থেকেছেন তার মৃত বস ড্যানি। মজার বিষয় ড্যানি কিন্তু ছবিতে আগাগোড়াই উপস্থিত। ভূত-গোয়েন্দার এই সহাবস্থানে এই চরিত্রে বেশ লেগেছে অঞ্জন দত্তকে। একের পর এক রহস্যের জাল সরাতে সারাতে এভাবেই আনাড়ি সুব্রত মৃত দেহ, ঘাঁটা মানুষ,রঙিন সম্পর্ক, পাপ দুর্নীতি, মিথ্যে পেরতে পেরতে সত্যিকারের গোয়েন্দা হয়ে ওঠে। সুব্রতর চরিত্রে সুপ্রভাত দাস এক নতুন চমক। সুব্রতর মাধ্যমে তথাকথিত গোয়েন্দা ইমেজটা ভাঙতে চেয়েছেন পরিচালক। সুব্রত নিজের মত করে চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তবে চরিত্রটাকে আরও একটু যত্ন নিয়ে গড়া যেত। ব্যবসায়ীর চরিত্রে সুজন নীল মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় বেশ পরিণত। তনুশ্রী চক্রবর্তী ও শোয়েব কবীরের অভিনয়ও বেশ ভালো। অভিজিৎ গুহ, কাঞ্চন মল্লিক, সুদিপা বসু এবং তনিকা বসুর চরিত্র গুলোকে ক্যামিয়া বলা চলে। প্রভাতেন্দু মন্ডলের ক্যামেরা বেশ কিছু ভালো দৃশ্য উপহার দিয়েছে থ্রিলারকে মাথায় রেখে। অর্ঘ্যকমল মিত্রর সম্পাদনা দুরন্ত। নীল দত্তের সুরে অঞ্জন দত্তের কন্ঠে ‘পুরনো চাঁদ’ গানটি গল্পের রেশ ধরে রেখেছিলো। অঞ্জন দত্তের ছবিতে গান বরাবরই উপরি পাওনা হয়ে থাকে।

PHOTO – BULAN

পরিচালক ছবির গল্পটি চেনা ছকে বাঁধতে চাননি। ফলে ছবি জুড়ে কৌতূহলের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর চমকও রয়েছে। তবে চমক গুলি সবসময় বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি।
সুব্রত বাঙালি গোয়েন্দাদের ভিড়ে এক নতুন সংযোজন। এ যেনো আমার আপনার ঘরের ছেলে।তাই আগামী দিনে সুব্রত আলাদা করে তার নিজের দর্শকবৃত্ত ঠিক কতটা তৈরি করে নিতে পারে সেটা দেখার।

তিতাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here